শীতের ঠান্ডা বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে। গিজার বা হিটার চালানো ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যায়। শীতে একটু উষ্ণতার জন্য গিজার বা হিটার চালানো আমাদের সবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলের চিন্তাও আমাদের মাথায় থাকে। শীতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর কিছু সহজ উপায় আছে। এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে আপনি শীতে আরাম পাবেন, আর বিদ্যুৎ বিলও কম থাকবে। চলুন, জেনে নিই কিভাবে শীতের কামড়ে গিজার-হিটার চালিয়েও বিদ্যুৎ বিল কমানো যায়।
শীতের সময় বিদ্যুৎ বিল কেন বাড়ে
শীতের সময় বিদ্যুৎ বিল কেন বাড়ে? শীতকালে গরম রাখার জন্য আমরা গিজার এবং হিটার ব্যবহার করি। এগুলোর জন্য বিদ্যুৎ খরচ বাড়ে। তাছাড়া, শীতকালে দিনের আলো কম সময় থাকে। ফলে বাতি, হিটার, গিজার অনেক সময় ধরে চালাতে হয়। এসব কারণে বিদ্যুৎ বিল বাড়ে।
শীতের প্রভাব
শীতের সময় তাপমাত্রা কমে যায়। এই সময় শরীর গরম রাখার জন্য বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। গিজার দিয়ে গরম পানি তৈরি করতে বেশি বিদ্যুৎ লাগে। হিটার চালিয়ে ঘর গরম রাখতে হয়। ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ
শীতকালে বাড়তি বিদ্যুৎ খরচের অন্যতম কারণ গিজার এবং হিটার। গিজার দিয়ে গরম পানির জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ লাগে। হিটার দিয়ে ঘর গরম রাখতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। এছাড়াও, শীতকালে দিনের আলো কম থাকে। ফলে বাতি চালিয়ে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
গিজার-হিটার ব্যবহারে বিদ্যুৎ সাশ্রয়
শীতের সময় গিজার এবং হিটার ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল অনেক বেড়ে যায়। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো যা মেনে চললে আপনি সহজেই বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারবেন।
গিজার ব্যবহারের টিপস
- গিজার সেটিং: গিজারের তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখুন।
- টাইমার ব্যবহার: গিজার নির্দিষ্ট সময়ে চালু ও বন্ধ করার জন্য টাইমার ব্যবহার করুন।
- ইনসুলেশন: গিজার ট্যাংকের ইনসুলেশন ঠিক রাখুন। এতে তাপ কম নষ্ট হবে।
- নিয়মিত পরিষ্কার: গিজারের স্কেল এবং সেডিমেন্ট নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
হিটার ব্যবহারের টিপস
- স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট: হিটারে স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহার করুন। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- সিলিং ফ্যান: হিটারের সাথে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করুন। এটি গরম বাতাস ছড়াতে সাহায্য করে।
- জ্বালানি কার্যকারিতা: হিটারের জ্বালানি কার্যকারিতা পরীক্ষা করুন। কার্যকারিতা কম থাকলে হিটার পরিবর্তন করুন।
- রুম সিলিং: ঘরের জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন। এতে তাপ বাইরে যাবে না।
স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহার
শীতের ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকেই গিজার-হিটার ব্যবহার করেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল কমাতে স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহার করা খুবই কার্যকরী। এটি বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সাহায্য করে, যা আপনাকে সাশ্রয়ী করে তুলবে।
থার্মোস্ট্যাটের উপকারিতা
স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট আপনার বাসার তাপমাত্রা নির্ধারণ করে, যা আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে।
সঠিকভাবে থার্মোস্ট্যাট সেট করা
স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট সঠিকভাবে সেট করলে বিদ্যুৎ বিল অনেক কমানো যায়। এটি করার জন্য প্রথমে আপনার বাসার তাপমাত্রা মাপুন। তারপর থার্মোস্ট্যাট সেটিংসে সেই তাপমাত্রা নির্ধারণ করুন।
এটি করার সময় খেয়াল রাখুন যেন তাপমাত্রা খুব বেশি না হয়। শীতকালে সাধারণত ১৮-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আরামদায়ক হয়।
/indian-express-bangla/media/media_files/2024/12/16/96QZfiEkjNQvjuoagT87.jpg)
Credit: bengali.indianexpress.com
বিকল্প উত্তাপের উৎস
শীতের কামড়ে বিদ্যুৎ বিল কমাতে অনেকেই বিকল্প উত্তাপের উৎস খুঁজছেন। গিজার বা হিটার ব্যবহার ছাড়াও কিছু সহজ এবং সাশ্রয়ী উপায় রয়েছে। সোলার হিটার ও গ্যাস হিটার শীতে উত্তাপের দারুণ বিকল্প।
সোলার হিটার
সোলার হিটার একটি পরিবেশ-বান্ধব এবং সাশ্রয়ী বিকল্প। এটি সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে কাজ করে। এতে বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই। ফলে বিদ্যুৎ বিল কমে যায়। সোলার হিটার ইনস্টল করতে প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও, এটি দীর্ঘমেয়াদে খরচ কমায়।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সোলার হিটার খুব কার্যকর। শীতকালেও পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায়। সোলার হিটার ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ কম হয়। এটি সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
গ্যাস হিটার
গ্যাস হিটার একটি দ্রুত উত্তাপের উৎস। এটি দ্রুত ঘর গরম করে। গ্যাস হিটারের খরচ তুলনামূলক কম। এটি ইনস্টল ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ।
গ্যাস হিটার ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি পায় না। গ্যাসের মূল্যও বিদ্যুতের তুলনায় কম। শীতের রাতে গ্যাস হিটার ব্যবহারে আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিত হয়।
বাংলাদেশে গ্যাস সহজলভ্য। তাই গ্যাস হিটার ব্যবহার করা সুবিধাজনক। তবে, গ্যাস হিটার ব্যবহারে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাড়ির উত্তাপ ধরে রাখার উপায়
শীতের সময় বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য ঘরের উত্তাপ ধরে রাখা খুবই জরুরি। গিজার-হিটার চালিয়ে ঘর গরম রাখার বদলে বাড়ির উত্তাপ বাড়ানোর কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। এতে বিদ্যুৎ বিল কমবে এবং ঘরও উষ্ণ থাকবে। আসুন জেনে নেই বাড়ির উত্তাপ ধরে রাখার কিছু কার্যকর উপায়।
ইনসুলেশন
বাড়ির ছাদ এবং দেয়ালে ইনসুলেশন লাগান। ইনসুলেশন ঘরের তাপ ধরে রাখে এবং ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে বাধা দেয়। ইনসুলেশন সঠিকভাবে না থাকলে ঘরের তাপ দ্রুত নষ্ট হয়। তাই ইনসুলেশন অত্যন্ত জরুরি। ইনসুলেশন লাগানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। ইনসুলেশন সঠিকভাবে লাগানো হলে ঘরের তাপমাত্রা অনেকক্ষণ ধরে রাখা যায়।
ড্রাফট প্রুফিং
ঘরের জানালা ও দরজায় ড্রাফট প্রুফিং করুন। ড্রাফট প্রুফিং করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে বাধা দেয়া যায়। জানালা ও দরজার ফাঁকগুলো ভালোভাবে বন্ধ করে রাখুন। দরজার নিচের ফাঁক বন্ধ করতে দরজার নিচে ড্রাফট এক্সক্লুডার ব্যবহার করুন। জানালার ফাঁক বন্ধ করতে জানালার রাবার সিল ব্যবহার করুন। ড্রাফট প্রুফিং করার ফলে ঘরের তাপ অনেকক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব।

Credit: fliphtml5.com
উচ্চ মানের গিজার-হিটার নির্বাচন
শীতের কামড়ে বিদ্যুৎ বিল কমাতে উচ্চ মানের গিজার-হিটার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো গিজার-হিটার আপনার ঘরকে উষ্ণ রাখে এবং বিদ্যুৎ বিলও কম রাখে। তাই আপনাকে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে উচ্চ মানের গিজার-হিটার নির্বাচনের সময়।
এনার্জি এফিশিয়েন্ট মডেল
এনার্জি এফিশিয়েন্ট মডেলের গিজার-হিটার আপনাকে বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করবে। এই মডেলগুলো কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে উষ্ণতা প্রদান করে।
- স্টার রেটিং: উচ্চ স্টার রেটিংযুক্ত গিজার-হিটার সবসময় এনার্জি এফিশিয়েন্ট হয়।
- ইনসুলেশন: ভালো ইনসুলেশনযুক্ত গিজার-হিটার তাপ ধরে রাখে এবং কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
সঠিক আকারের গিজার
সঠিক আকারের গিজার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বড় আকারের গিজার বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, অন্যদিকে ছোট আকারের গিজার পর্যাপ্ত উষ্ণতা দিতে পারে না।
আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা এবং ঘরের আকার অনুযায়ী গিজার নির্বাচন করুন।
পরিবারের সদস্য সংখ্যা | গিজারের আকার (লিটার) |
---|---|
১-২ | ১০-১৫ |
৩-৪ | ২০-২৫ |
৪+ | ৩০+ |
এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সহজেই সঠিক আকারের গিজার নির্বাচন করতে পারবেন।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ
শীতের দিনে বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করলে গিজার এবং হিটার উভয়ই ভালোভাবে কাজ করে। এটি বিদ্যুৎ খরচ কমায় এবং ডিভাইসের আয়ু বাড়ায়। নিচে গিজার এবং হিটারের পরিষ্কার ও সেবা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
গিজারের পরিষ্কার
গিজার নিয়মিত পরিষ্কার করলে তা ভালোভাবে কাজ করে। গিজার পরিষ্কারের জন্য কিছু সহজ পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
- প্রথমে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করুন।
- গিজারের ভেতরের পানি সম্পূর্ণভাবে ফেলে দিন।
- গিজারের ভেতরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
- ফিরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিন এবং গিজার চালু করুন।
এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে গিজার দীর্ঘদিন ভালো অবস্থায় থাকে।
হিটারের সেবা
হিটারের সেবা নিয়মিত করলে তা ভালোভাবে তাপ উৎপাদন করে। হিটারের সেবা করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
- প্রথমে হিটার বন্ধ করুন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।
- হিটারের ফিল্টারগুলো পরিষ্কার বা পরিবর্তন করুন।
- হিটারের ভিতরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
- ফিরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিন এবং হিটার চালু করুন।
এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে হিটার দীর্ঘদিন ভালো থাকে এবং বিদ্যুৎ বিল কমে।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর অন্যান্য উপায়
শীতকালে বিদ্যুৎ বিল কমানোর অনেক উপায় রয়েছে। গিজার আর হিটার চালানোর সময় কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আপনার বিদ্যুৎ বিল কমবে। এ সম্পর্কে জেনে নিন আরও কিছু উপায়, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক হতে পারে।
লো-ফ্লো শাওয়ার হেড
লো-ফ্লো শাওয়ার হেড ব্যবহার করলে পানির প্রবাহ কম হয়। ফলে কম পানি গরম করতে হয়। এতে বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের লো-ফ্লো শাওয়ার হেড পাওয়া যায়। এগুলো সাশ্রয়ী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য।
এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার
এনার্জি সেভিং বাল্ব বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণ বাল্বের তুলনায় এনার্জি সেভিং বাল্ব কম বিদ্যুৎ খরচ করে। এ ধরনের বাল্বের আয়ুষ্কালও বেশি। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।

Credit: www.maadhukari.com
Frequently Asked Questions
শীতকালে গিজার-হিটার চালানো কি বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায়?
শীতকালে গিজার-হিটার চালানো বিদ্যুৎ খরচ বাড়াতে পারে। তবে কিছু কৌশল মেনে চললে বিদ্যুৎ বিল কমানো সম্ভব।
গিজার-হিটারের বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় কী?
গিজার-হিটারের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখুন। গিজার নিয়মিত পরিষ্কার করুন। নির্ধারিত সময়ে গিজার ব্যবহার করুন।
কোন সময় গিজার চালানো বেশি কার্যকর?
সকাল এবং সন্ধ্যায় গিজার চালানো বেশি কার্যকর। এসময় কম বিদ্যুৎ খরচ হয়।
হিটারের তাপমাত্রা কত রাখলে বিদ্যুৎ খরচ কম হবে?
হিটারের তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখুন। এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হবে।
Conclusion
শীতের কামড়ে বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য কিছু সহজ কৌশল মেনে চলুন। গিজার-হিটার ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। সঠিক তাপমাত্রায় সেট করুন। ব্যবহারের পরপরই বন্ধ করুন। গিজার-হিটার ইনস্যুলেশন নিশ্চিত করুন। বিদ্যুৎ বাঁচাতে সঠিক সময়ে পরিষ্কার করুন। সোলার হিটার বিবেচনা করতে পারেন। শীতের সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। সঠিকভাবে গিজার-হিটার ব্যবহার করুন। বিদ্যুৎ বিল কমান। পরিবারকে উষ্ণ রাখুন।