আপনি যদি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করতে চান, তবে এই ব্লগটি আপনার জন্য। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজনীয় এবং সুবিধাজনক। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন প্রক্রিয়া অনেকের কাছেই জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু এটি সহজ এবং দ্রুত হতে পারে যদি আপনি সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করেন। এই ব্লগে আমরা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন, এর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রক্রিয়াটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনি যদি নতুন বাড়ি বা ব্যবসার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ চান, তবে সঠিক নির্দেশনা জানা প্রয়োজন। এটি আপনাকে সময় বাঁচাতে সাহায্য করবে এবং সার্ভিস পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ করবে। আসুন, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন প্রক্রিয়াটি বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ কেন প্রয়োজন
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ কেন প্রয়োজন? জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারি। চলুন জেনে নিই নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজনীয়তা এবং এর সুবিধা।
বৈদ্যুতিক সুবিধার গুরুত্ব
বৈদ্যুতিক সুবিধা আমাদের জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন কল্পনা করা কঠিন। এটি আমাদের জীবনকে সহজ ও আরামদায়ক করে তোলে।
চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিনোদন সবকিছুই বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া মানে এই সমস্ত সুবিধাগুলি সহজলভ্য হওয়া।
সুবিধা ও সুফল
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত, বিদ্যুৎ আমাদের ঘর আলোকিত করে। এটি রাতে পড়াশোনা বা কাজ করা সহজ করে তোলে।
দ্বিতীয়ত, বিদ্যুতের মাধ্যমে রান্না ও ঘরের কাজ করা সহজ হয়। এটি আমাদের সময় ও পরিশ্রম বাঁচায়। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ আমাদের ঘরে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালাতে সাহায্য করে। যেমন ফ্যান, টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদি।
চতুর্থত, বিদ্যুতের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা ও শিল্প ক্ষেত্রও উন্নত হয়। বিদ্যুৎ ছাড়া কারখানাগুলিতে উৎপাদন সম্ভব নয়।
আবেদনের জন্য যা জানা দরকার
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করার আগে এ তথ্য গুলো ভালোভাবে জেনে নিন।
আবেদন করার সময় ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র ও সংযোগস্থলের মূল দলিল/খারিজের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে।
সার্ভিস ড্রপের দুরত্ব ১৩০ ফুটের মধ্যে হতে হবে।
সঠিকভাবে মেপে সার্ভিস ড্রপের দুরত্ব প্রদান করুন। ভুল তথ্য দিলে সংযোগ পেতে বিলম্ব হতে পারে।
আবেদনের সাত দিনের মধ্যে ঘর/হাউজ ওয়্যারিং এবং সোলার ইউনিট স্থাপন করে তা অনলাইনে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
মোট লোড ৮০ কিলোওয়াটের বেশি হলে এইচটি সংযোগের নিয়মাবলী প্রযোজ্য হবে।
অনলাইনে সার্ভে করার পর প্রয়োজনীয় অর্থ জমাদানসহ নির্দেশনা এসএমএস-এর মাধ্যমে জানানো হবে।
আবেদন ফরমের লাল() চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
আবেদনপত্রে গ্রাহকের নিজস্ব মোবাইল নম্বর প্রদান করুন।
আবেদনের পর প্রাপ্ত ট্র্যাকিং আইডি এবং পিন নম্বর সংরক্ষণ করুন।
প্রথম কাজ
প্রথমে নতুন মিটার সংযোগের জন্য আপনাকে যেই স্থানে সংযোগ নেবেন, সেই বাড়িটি সুন্দরভাবে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং করতে হবে। ওয়্যারিং অবশ্যই একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ানের মাধ্যমে করতে হবে।
ওয়্যারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ:
- মেইন সুইচ
- মিটার বোর্ড
- আর্থিং রড
- সার্কিট ব্রেকার
- ঘরের ভেতরের সুইচ ও সকেট ইন্ডিকেটর
কাগজপত্র সংগ্রহ:
এই উপকরণগুলো ক্রয় করার সময় দোকানদারের কাছ থেকে রশিদ নিন এবং সই সংগ্রহ করুন। এরপর ইলেকট্রিশিয়ান যিনি ওয়্যারিং করবেন, তার সই ও প্রত্যয়ন নিন। তবে বর্তমান সময়ে পল্লী বিদ্যুতের কাছে তার নাই। তাই তারা সার্ভিস ড্রপ (ডি-১১) কিনতে বলবে। যদি তার কেনা লাগে তবে তার রশিদ দোকানদারের নিকট হতে সংগ্রহ করতে হবে। সাধারনত তার পল্লী বিদ্যুৎ ফ্রি দিয়ে থাকে। যদি আপনি কিনেও থাকেন তবে পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিলের সাথে তারা সমন্বয় করে দিবে।
বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এর তালিকা
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। এই নথিগুলি সঠিকভাবে জমা দিলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ এবং দ্রুত হবে। প্রয়োজনীয় নথির তালিকার মধ্যে পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণপত্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নিচে এই নথিগুলির বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।
আবাসিক নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ এর জন্য:

বাণিজ্যিক নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য:

শিল্প সংযোগের জন্য:

শিক্ষা, ধর্মীয়, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের জন্য:
বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এর তালিকা
অস্থায়ী নির্মাণের জন্য:

সেচ সংযোগের জন্য:

পল্লী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আরো কিছু জিনিস চাইতে পারে । যেমন জমির দলিল (যেখানে বোরিং করবেন), ১০ জন কৃষকের নাম (যারা আপনার মটর থেকে পানি দিবে)
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি
অতিরিক্ত নথিগুলির মধ্যে মালিকানার প্রমাণপত্র বা জমির দলিল অন্তর্ভুক্ত। যদি আপনি ভাড়াটিয়া হন, তাহলে বাড়িওয়ালার সম্মতির চিঠি জমা দিতে হবে। ব্যবসায়িক সংযোগের জন্য, ব্যবসার নিবন্ধন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
আবেদন জমা দেওয়ার পদ্ধতি
যাই হোক, সব ডকুমেন্ট যদি ঠিক থাকে তবে এবার আবেদন শুরু করি চলুন। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন জমা দেওয়ার পদ্ধতি বেশ সহজ। দুটি প্রধান পদ্ধতি আছে – অনলাইন এবং অফলাইন। আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। এখানে প্রতিটি পদ্ধতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
অনলাইন আবেদন
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং সুবিধাজনক। প্রথমে বিদ্যুৎ সাপ্লাই সংস্থার ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় তথ্য এবং কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি রসিদ পাবেন। এই রসিদটি সংরক্ষণ করতে হবে পরবর্তী প্রয়োজনের জন্য।
আপনাদের সুবিধার্থে আবেদনের লিংক আমি দিয়ে দিচ্ছি-
- বিপিডিবি এলাকার গ্রাহক (অনলাইনে আবেদনের লিংক)
- বিআরইবি (পল্লী বিদ্যুৎ) এলাকার গ্রাহক (অনলাইনে আবেদনের লিংক)
- ডিপিডিসি এলাকার গ্রাহক (অনলাইনে আবেদনের লিংক)
- ডেসকো এলাকার গ্রাহক (অনলাইনে আবেদনের লিংক)
- ওজোপাডিকো এলাকার গ্রাহক (অনলাইনে আবেদনের লিংক)
- নেসকো এলাকার গ্রাহক (অনলাইনে আবেদনের লিংক)
অফলাইন আবেদন
অফলাইন আবেদন প্রক্রিয়াটিও সহজ। প্রথমে নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হবে। সেখানে একটি আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। ফর্মের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার পরে একটি রসিদ পাবেন। এই রসিদটি সংরক্ষণ করতে হবে পরবর্তী প্রয়োজনের জন্য।
কম্পিউটারের দোকানে
যদি নিজে আবেদন না করেন তবে কোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়েও করতে পারবেন। কাগজপত্র সহ নিকটস্থ কম্পিউটার দোকানে গিয়ে তাদের বললেই হবে। আবেদন ফি ১১৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। আবেদন সম্পন্ন হলে ট্র্যাকিং আইডি এবং পাসওয়ার্ড পাবেন।
পরবর্তী ধাপ:
আপনার আবেদন পর্যালোচনা করতে ২-৩ দিনের মধ্যে একজন ওয়্যারিং পরিদর্শক আসবেন। বাড়ির বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এবং দূরত্ব যাচাই করবেন। সব কিছু ঠিক থাকলে SMS এর মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে যে কত টাকা জমা দিতে হবে।
প্রাথমিক খরচ:
- প্রতি কিলোওয়াট ৪৮০ টাকা
- সরকারি ফি ১৪৪ টাকা
- মোট জামানত: ১১০৪ টাকা
এই টাকা ক্যাশ কাউন্টার বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জমা করা যাবে। জমা দেওয়ার পর ১-২ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ অফিস থেকে অর্ডার যাবে এবং টেকনিশিয়ান এসে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করবেন।
মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট) এর মাধ্যমে জামানত জমা করার পদ্ধতি:


[N.B: উপরের খরচ গুলো পল্লী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিভিন্ন বিদ্যুৎ ডিস্টিবিউশন কম্পানির খরচ কিছুটা তারতম্য হতে পারে। ]
সম্ভাব্য সমস্যার সমাধান
নতুন বিদ্যুৎ মিটার সংযোগের আবেদন করার সময় কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে চিন্তা করবেন না, এই সমস্যাগুলির সমাধান সহজেই সম্ভব। নিচে আমরা সাধারণ সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করব এবং তাদের সমাধান প্রদান করব।
সাধারণ সমস্যার সমাধান
প্রথমে, আবেদন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। ভুল তথ্য বা অসম্পূর্ণ আবেদন ফর্ম গ্রহণযোগ্য নয়। ফর্ম পূরণের সময় সব তথ্য সঠিকভাবে দিন।
দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় নথি জমা দিন। জাতীয় পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণপত্র এবং জমির মালিকানার নথি জমা দিতে হবে।
তৃতীয়ত, আবেদন ফি সঠিকভাবে জমা দিন। নির্ধারিত ফি জমা না দিলে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে না।
যোগাযোগের তথ্য
যদি কোনো সমস্যা হয়, সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করুন। তাদের হেল্পলাইন নম্বর বা ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন।
স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজনে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন।
তথ্য ও সহায়তার জন্য বিদ্যুৎ অফিসের ওয়েবসাইট নিয়মিত চেক করুন। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
Frequently Asked Questions
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কী কী কাগজপত্র দরকার?
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদনপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, বাড়ির মালিকানার প্রমাণ, এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র লাগবে।
বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে কত সময় লাগে?
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সাধারণত ৭ থেকে ১৫ কার্যদিবস সময় লাগে।
আবেদন বাতিল হলে কি করব?
কোনো কারণে যদি আপনার আবেদন বাতিল হয়, তবে কেন বাতিল হয়েছে তা জানানো হবে এবং পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন কোথায় জমা দিব?
বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন স্থানীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।
বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন ফি কত ?
আবেদন ফি ১১৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
Conclusion
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন প্রক্রিয়া সহজ। এটি সময় বাঁচায়। আবেদন ফর্ম পূরণ করুন সঠিক তথ্য দিয়ে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন। সংযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। এটি সহজ এবং সরল। আপনার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত হবে। নতুন সংযোগের জন্য এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। বিদ্যুৎ সংযোগের অভিজ্ঞতা সহজ হবে। সর্বশেষে, সবকিছু ঠিকভাবে করুন। সফল সংযোগ উপভোগ করুন।