বৈদ্যুতিক মিটার কত প্রকার?

বৈদ্যুতিক মিটার হল একটি যন্ত্র যা ব্যবহারকারী বা গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ পরিমাপ করে। এই মিটারটি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা দ্বারা গ্রাহকদের ব্যবহৃত বিদ্যুতের হিসাব রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। বৈদ্যুতিক মিটার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, এবং এগুলির মধ্যে কিছু আধুনিক প্রযুক্তির মিটার রয়েছে যা বেশি সঠিক এবং সহজে ব্যবহৃত হতে পারে।

নিচে বৈদ্যুতিক মিটারের প্রধান প্রকারগুলি দেওয়া হলো:


১. অ্যানালগ মিটার (ডায়াল মিটার)

অ্যানালগ মিটারটি পুরনো ধরনের মিটার। এটি একটি ঘূর্ণমান ডায়াল সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে একটি ঘূর্ণমান ড্রাম তার পাশে থাকা ডায়ালগুলোকে ঘুরায়। প্রতিটি ডায়ালটি একক ইউনিটের জন্য একটি সংকেত প্রদান করে, এবং এই ডায়ালগুলির মাধ্যমে আপনার ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। এই ধরনের মিটার সাধারণত হাতে পড়ে মাপা এবং মিটার রিডিংয়ের জন্য লোক পাঠানো হয়।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • সঠিক কিন্তু মনিটরিং করতে কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
  • খরচ কম, তবে আধুনিক প্রযুক্তি কম।

২. ডিজিটাল মিটার

ডিজিটাল মিটারটি অ্যানালগ মিটারটির আধুনিক সংস্করণ। এতে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে থাকে, যা গ্রাহকের ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ সরাসরি প্রদর্শন করে। এটি ব্যবহারের জন্য আরও সহজ এবং রিডিং নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় না, কারণ ডিসপ্লে তে সঠিক তথ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • সহজ রিডিং এবং দ্রুত হিসাব।
  • সঠিক এবং স্পষ্ট ফলাফল।
  • গুণগতভাবে বেশি নির্ভরযোগ্য।

৩. প্রিপেইড মিটার

প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের আগে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় করার সুবিধা প্রদান করে। এতে গ্রাহক নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ টাকা প্রদান করেন এবং সেই অনুযায়ী মিটার তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ পরিমাপ করে। যখন গ্রাহকের ক্রেডিট শেষ হয়, তখন বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • আগে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়।
  • বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায় যখন ক্রেডিট শেষ হয়ে যায়।
  • খুবই সুবিধাজনক এবং অর্থ সঞ্চয়ের জন্য উপযুক্ত।

৪. স্মার্ট মিটার

স্মার্ট মিটার একটি উন্নত প্রযুক্তির মিটার, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাকে পাঠায়। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের গ্রাফ দেখতে পারেন এবং সরাসরি অনলাইনে পরিশোধ করতে পারেন। এই মিটারটি অনেক বেশি অটোমেটেড এবং সঠিক।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • রিয়েল টাইমে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ পরিমাণ মনিটর করা যায়।
  • স্বয়ংক্রিয় রিডিং এবং বিলিং সিস্টেম।
  • ব্যবহারকারী এবং সংস্থার জন্য সঠিক এবং সুবিধাজনক।

৫. ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) মিটার

ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) মিটার আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত একটি উন্নত মিটার, যা স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েব পোর্টাল দ্বারা মনিটর করা যায়। এটি বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ, ভোল্টেজ, পাওয়ার ফ্যাক্টর ইত্যাদি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দেয় এবং যেকোনো সময় ব্যবহারকারী এটি চেক করতে পারেন।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • রিয়েল টাইম তথ্য এবং পরিসংখ্যান।
  • স্মার্টফোন বা ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ এবং সচেতনতা প্রদান করে।

৬. ভারতীয় ডিজিটাল মিটার (Electronic Meter)

ভারতীয় ডিজিটাল মিটারটি সাধারণত আধুনিক ডিজিটাল মিটার, যা সঠিকভাবে গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের হিসাব রাখে। এই মিটারটি সাধারণত বাড়ির বা বাণিজ্যিক স্থানে ব্যবহৃত হয় এবং সময়-সীমার মধ্যে ব্যবহৃত বিদ্যুতের সঠিক হিসাব তুলে ধরে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • দ্রুত রিডিং এবং সঠিক হিসাব।
  • প্রযুক্তিগত সাপোর্টের জন্য খুবই নির্ভরযোগ্য।
  • বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে কোন প্রকার সমস্যা হয়নি।

উপসংহার

বৈদ্যুতিক মিটার বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, তবে আজকের দিনে ডিজিটাল, স্মার্ট ও প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মিটারগুলি বিদ্যুৎ ব্যবহারের হিসাব রাখার কাজটি অনেক সহজ, সঠিক এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও কার্যকরী করে তোলে। তাই, আপনার বাড়িতে বা ব্যবসায় ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মিটারটি আপনার প্রয়োজন ও সুবিধার উপযোগী হওয়া উচিত।

প্রশ্ন-উত্তর 

প্রশ্ন ১: বৈদ্যুতিক মিটার কত প্রকার?
উত্তর: বৈদ্যুতিক মিটার প্রাথমিকভাবে অ্যানালগ, ডিজিটাল, প্রিপেইড, স্মার্ট এবং IoT মিটার প্রকারে বিভক্ত।

প্রশ্ন ২: স্মার্ট মিটার কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: স্মার্ট মিটার রিয়েল টাইমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ পরিমাপ করে এবং সেই তথ্য সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাকে পাঠায়।

1 thought on “বৈদ্যুতিক মিটার কত প্রকার?”

Leave a Comment